শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১ |   ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খালেদা জিয়াকে নিয়ে মিথ্যাচার বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের 

প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০২২ ১৩ ০১ ০১  

খালেদা-জিয়াকে-নিয়ে-মিথ্যাচার-বিএনপিপন্থী-চিকিৎসকদের 

খালেদা-জিয়াকে-নিয়ে-মিথ্যাচার-বিএনপিপন্থী-চিকিৎসকদের 

একাধিক দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার ধরণ, প্রকৃতি নিয়ে চরম মিথ্যাচার, প্রতারণা ও জালিয়াতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করাতে বাধ্য করা হচ্ছে। তবে যে হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছেন খালেদা জিয়া, সেই এভারকেয়ার হাসপাতালের কোনো চিকিৎসকই উপস্থিত ছিলেন না সংবাদ সম্মেলনে।

ওই সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এবং চিকিৎসা নিয়ে কথা বলেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এফ এম সিদ্দিকী, ডা. এ কিউ এম মহসিন, ডা. শামসুল আরেফিন, ডা. মো. নূর উদ্দিন, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ডা. আল মামুন। তারা কেউই এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক নন।

সাধারণ নিয়ম হলো, একটি হাসপাতালের যেই চিকিৎসকরা একজন রোগীকে চিকিৎসা দেন, সেই চিকিৎসকদেরই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য। তারাই রোগীর শারীরিক অবস্থা সম্বন্ধে সর্বশেষ তথ্য দিতে পারবেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে এমন কিছুই দেখা যায়নি।

ডা. এফ এম সিদ্দিকী চিকিৎসা দেন ল্যাবএইড হাসপাতালে। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালের কেউ নন। তিনি কীভাবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেন প্রশ্ন এখন সবার। এমনকি তার চিকিৎসা সম্পর্কিত যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা মেডিকেল রীতি-নীতির পরিপন্থী বলে একাধিক চিকিৎসক অভিযোগ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হলো, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। এর চিকিৎসার ৩টি ধাপ রয়েছে বলে  জানান চিকিৎসকরা। প্রথম ধাপ হলো মুখে খাওয়ার ওষুধ। দ্বিতীয় ধাপ হলো তার লিভার প্রতিস্থাপন। আর তৃতীয় ধাপ স্টেম সেল পদ্ধতি।

চিকিৎসকরা জানান, খালেদা জিয়ার শরীরের যে অবস্থা, তাতে তাকে ওষুধ দিয়েই এখন পর্যন্ত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বা স্টেম সেল দেওয়ার মতো বাস্তব অবস্থা নেই। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য যে ‘ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপ্যাটিক পোর্টোসিস্টেমিক শান্ট (Transjugular Intrahepatic Portosystemic Shunt-TIPS)’ পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, সেই ‘TIPS’ পদ্ধতি কোনোভাবেই লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা নয় বলে বিশেষজ্ঞদের মত।

তারা বলছেন, এটি হলো রক্তক্ষরণ বন্ধের জন্য একটি ব্যবস্থা মাত্র। তাহলে খালেদা জিয়ার এই চিকিৎসা নিয়ে এ ধরনের নাটক করা কেনো হচ্ছে- প্রশ্ন অনেকেরই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এভারকেয়ার হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে এক ধরনের প্রতারণা এবং জালিয়াতি করা হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যা বলছেন, তার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা, যারা মূলত বিএনপির পদধারী রাজনীতিবিদ।

তাদের কারোরই লিভারের উন্নত চিকিৎসা সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান নেই। বরং খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে পুঁজি করে যেকোনো মূল্যে তাকে বিদেশে পাঠানোর একটি পরিকল্পনাই আস্তে আস্তে ফাঁস হচ্ছে।

এদিকে দেশের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লিভার সিরোসিসের ফলে যে রক্তক্ষরণ হয়, তা ঠেকানোর জন্য ‘TIPS’ পদ্ধতির চিকিৎসার কথা বলছেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা। তবে এই টিপস পদ্ধতি খালেদা জিয়ার জন্য কখনই সঙ্গত নয়। কারণ এর ফলে উচ্চমাত্রার হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পৃথিবীতে লিভার সিরোসিস আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ৬৫ ভাগ ওষুধে সেরে যান। বাকি ১০ ভাগ অন্য চিকিৎসা নেন। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হলেই যে কেউ দ্রুত মৃত্যুবরণ করবেন, এমন কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য-প্রমাণও নেই।

বরং বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, যেকোনো মুহূর্তে তিনি মারা যেতে পারেন। এরকম বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সরকারকে একটা চাপে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেনো সরকার সব সমালোচনা এড়াতে খালেদা জিয়াকে দ্রুততর সময়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির মূল লক্ষ্য খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নয়। তারা চান খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের ওপর একটি মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করতে। সরকার যদি অনড় অবস্থানে থাকে, তবুও বিএনপির লাভ। সরকারের অনড় অবস্থানকে ইস্যু করে রাজনৈতিক আবহ তৈরি করা যাবে।

আর খালেদা জিয়াকে বাজির দানে রেখে এই কাজে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন (ড্যাব)- এর নেতাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণরূপে মেডিকেল ইথিক্সের পরিপন্থী এবং প্রতারণাও বটে।

Provaati
দৈনিক প্রভাতী
এই বিভাগের আরো খবর